প্রতারণা ও শোষণের একটি চক্র যা বাংলাদেশী কলেজ ছাত্রদের বঞ্চিত করে তাদের টাকা এবং পড়াশুনা থেকে।
গল্পকার- Elroi Yee, Ian Yee, Lim May Lee এবং Samantha Chow
ভিডিও ধারণে R.AGE
আমরা সামিনের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম রাতের আঁধারে ,সাইবারজায়ায় তার কংসিতে (অংশীদারি বাসস্থান)। এর ঠিক পাশেই দাড়িয়ে আছে একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের কাঠামো। আমরা হেঁটে পার হলাম পাতলা কাঠের বেড়া দেয়া কুটির এবং শিপিং কন্টেইনার , একটি খোলা গোসলখানা, দুর্বল হয়ে পড়া একটি সিঁড়ি । সে ওইদিন অসুস্থ ছিল, এবং আমাদের সাথে কথা বলতে পারেনি।
ফরিদের সাথে আমাদের দেখা হয়েছে জহরবাহ্রুর যে গুদামঘরে সে কাজ করে সেখানে। সে আমাদেরকে তার কাজ করার জায়গা দেখাল, যেখানে সে সব প্রবেশমান এবং বহির্গামী মালামালের যাচাই এবং হিসাব রাখে । আমরা জানতে চাইলাম,“তুমি কোথায় ঘুমাও?”। সে তার কাজ করার টেবিলের পাশে কংক্রিটের মেঝের দিকে দেখিয়ে, বলল, “আমি এইখানে গদি বিছিয়ে দেই”, যেটা আমাদের দেখাতে সে লজ্জাবোধ করছিল।
বিপ্লবের সাথে কথা বলতে, আমরা তাকে সেপাং-এর একটি শপিং মল থেকে রাতের বেলা তুলে নিয়ে, গাড়ি চালিয়ে অনেক দূরে নিয়ে গেলাম যাতে তার তত্ত্বাবধায়ক তাকে আমাদের সাথে কথা বলতে দেখতে না পায়। পুলিশদের এড়ানোর জন্য আমরা প্রধান সড়কগুলো থেকে দূরে ছিলাম। সে বলল, একবার গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য তাকে আবর্জনার স্তূপে লুকাতে হয়েছিল।
এই তিনটি ছেলেই বাংলাদেশী যারা মালায়সিয়াতে এসেছে কলেজে শিক্ষা লাভ করতে, বোঝাই যাচ্ছে তারা একটি মানব পাচার চক্রের শিকার যা মালায়সিয়া থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত প্রসারিত। তারা এখন তাদের পড়াশুনা শেষ করার ক্ষীণ আশা নিয়ে কাজ করছে অবৈধভাবে, রয়েছে ঋণের বোঝায় এবং সহ্য করছে অপরাধীর মত আচরন।
এইখানে তাদের যাত্রাপথে, তারা কলেজ “ এজেন্টদের” দ্বারা নিজ দেশে এবং মালায়সিয়াতে প্রতারিত এবং শোষিত হয়েছে, এবং যে কলেজগুলোর তাদেরকে শিক্ষিত করার কথা ছিল তাদের অবহেলার শিকার হয়েছে। তাদের গল্প বুঝতে হলে, আমাদের প্রথমে করিমের গল্প বুঝতে হবে।
করিমের সাথে আমাদের দেখা হয়েছে প্রকাশ্যে দিবালোকে , একজন ২৫ বছর বয়সী বাংলাদেশী কলেজ ছাত্র। সে বসে ছিল একটি আন্তর্জাতিক কলেজের বাহিরে যার ৮ তলা বিশিষ্ট ভবন আশেপাশের নিচু দোকানপাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদেরকে দেখে তাকে খুব খুশি মনে হল, ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজি বলতে পারায় সে খুব উত্তেজিত। আমরা জানতে পারলাম যে এইটা মালায়সিয়াতে তার প্রথম সপ্তাহ, সে একজন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র, এবং সে তার পড়ার ছুটিতে মালায়সিয়া ঘুরে দেখতে চায়। সে তাৎক্ষণিক ভাবে জিজ্ঞাসা করল আমাদের কোন সমস্যা না হলে আমরা কি তাকে সাথে নিতে পারি কিনা। সে চোখ উজ্জ্বল করে বলল, সে মালায়সিয়াকে ভালবাসে। এটি খুব সুন্দর।
দেখুন কিভাবে সামিন, ফরিদ, বিপ্লব এবং অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্তরা পাচার হল মালায়সিয়ায়।
প্রতারণার শুরুটা এখান থেকেই, যখন একজন শিক্ষা এজেন্ট একজন প্রত্যাশিত ছাত্রকে জানালো মালায়সিয়াতে পড়াশুনা করা কতটা চমৎকার। এটি আধুনিক ,আরামদায়ক এবং মুসলিম-বান্ধব । সব সত্য, কিন্তু তারপর এজেন্ট এতে যোগ করল মিথ্যা এবং তার বিক্রয় সীমার অসত্য বিবরণ। সেখানে চাকরি প্রস্তুত এবং তোমার অপেক্ষায় আছে। তুমি তোমার খন্ডকালীন চাকুরী করে নিজের পড়ার খরচ চালাতে পারবে। কলেজটি নামকরা। তুমি ডিগ্রি পেতে পার এবং ধনী হতে পারো।
“মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশি অভিবাসী অধিকার কর্মী এবং এডভোকেসি দল Migrant88 এর প্রতিষ্ঠাতা আশিক রহমান বলেন, “বাংলাদেশী তরুণরা পড়াশোনার জন্য মরিয়া ।” “তারা পূর্বের প্রজন্মের দারিদ্র্য এবং বেকারত্বের হাত থেকে বাঁচার উপায় হিসাবে এটি দেখে, এবং তারা বিদেশে পড়াশোনা করতে পছন্দ করে কারণ এটি আলদা সামাজিক মর্যাদা যোগ করে।”
বহু বছর ধরে বাংলাদেশ,উপসাগরীয় দেশ যেমন সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়াসহ সমৃদ্ধ দেশগুলিতে শ্রম রপ্তানি করেছে, কারণ এর বৃহৎ, তরুণ জনগোষ্ঠীর চাকুরীর প্রয়োজন যেটা তার অর্থনীতি তাকে দিতে পারছেনা। কিন্তু যেহেতু স্থানীয় অর্থনীতি ক্রমবর্ধমান, রপ্তানিতে শ্রম থেকে বিদেশী রেমিটেন্সের অংশ হিসেবে, চাহিদা এখন চাকরি থেকে শিক্ষায় স্থানান্তরিত হচ্ছে। ২০১২ সালের ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটি রিপোর্টে, বাংলাদেশ এর তাত্ত্বিক নিয়োগ পরবর্তী দশকে ৭০০০০০ এরও বেশি হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে, এটি বিশ্বের ১০ টি দেশের মধ্যে একটি, যা বিশ্বব্যাপী দ্রুততম ক্রমবর্ধমান তৃতীয় শিক্ষার ক্ষেত্রগুলির একটি, এই ক্রমবর্ধমান উন্নতি দেশটি মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে।
শোষণের জন্য এটি একটি উপযুক্ত পরিস্থিতি। ছাত্রদের হতাশার প্রেক্ষিতে এজেন্টরা তাদের দাম বাড়িয়ে দেয়। প্রথম বছরের জন্য ভিসা এবং কলেজ ফি’র জন্য, তারা নিয়ে থাকে ৪০০০০০০ টাকা পর্যন্ত (২১০০০ রিঙ্গিত)। যা বাংলাদেশে তিন বছরের মজুরীর সমান। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দ্বারা প্রলোভিত, কিছু তাদের পারিবারিক জমি বিক্রি করে বা ব্যাংক এবং ঋণকর্তাদের থেকে এই পরিমাণ টাকা ধার করে । সামিন ও ফরিদ উভয়ই দিয়েছে ২৬০০০০ টাকা (১৩,৭৮৯ ringgit)। বিপ্লবকে দিতে হয়েছে ৩০০০০০ টাকা (১৫,৯১০ রিঙ্গিত)। করিমকে দিতে হয় ৩৫০০০০ টাকা (১৮,৫৬২ রিঙ্গিত)।
পরেরবার আমরা করিমের সাথে দেখা করি , একমাস পর রোজার ঈদে , এবং আমরা তাকে ও অন্য একজন বাংলাদেশি ছাত্রকে দ্রুত শহর ভ্রমণে নিয়ে যাব যা তারা নিদারুনভাবে দেখতে চায়। প্রথম কেএলসিসি, তারপর দাতারা মর্দেকা। সে প্রতিটি দৃশ্য খুব পছন্দ করে: “বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়াকে ডাকে ‘এশিয়ার ইউরোপ’, রয়েল সেলানগর ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে সে এই কথা বলে। সে সেখানে একটি ছবি তুলতে চায় কারণ একজন বিখ্যাত বাংলাদেশী গায়ক ঠিক এটার সামনে একটি সঙ্গীত ভিডিও ধারণ করেছিল। সে আরো কয়েকজন বাংলাদেশির সাথে একত্রিত হয়ে এই বিষয়ের উপর একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা করে। কিন্তু যখন আমরা তার পড়াশোনার বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করি, তখন তার মুখে নেমে আসে ছায়া । সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে অনিচ্ছুক, কিন্তু আমরা জানতে পারি যে সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য আবেদন করেছিল, কিন্তু তার কলেজ সে কোর্সটি পড়ায় না। তার বন্ধু ছিল আরো স্পষ্টবাদী: “এজেন্ট একজন মিথ্যাবাদী।”
প্রতারণা চলতেই থাকে যখন করিমের মত ছাত্ররা মালয়েশিয়ার মাটিতে পা রাখে। এজেন্টগুলো হয় বাংলাদেশ বা মালয়েশিয়া ভিত্তিক। উভয় ক্ষেত্রে, তাদের প্রতিনিধি অন্য দেশেও রয়েছে- একজন মালয়েশীয়-ভিত্তিক এজেন্টের লোক থাকবে যে বাংলাদেশে তার জন্য কাজ করবে, এবং মালায়সিয়াতেও একি রকম। একজন ছাত্র যখন মালায়সিয়াতে পৌঁছায় তখন মালয়েশিয়া ভিত্তিক এজেন্টের কাছে হস্তান্তরিত হয়। ছাত্ররা এই এজেন্টের উপর নির্ভর করে, কারণ তাদের, তারা জানে না যে সাধারন পরিবহন কীভাবে কাজ করে, তাদের কিছু বন্ধু থাকে যদি কারও উপর ভরসা করতে পারে, এবং ইংরেজিতে রয়েছে তাদের সীমিত দক্ষতা । ঠিক যেমন বাংলাদেশের এজেন্টদের শিকার হয়েছে জীবনযাপনের জন্য তাদের হতাশার ফলে, মালয়েশিয়ার এজেন্টদের শিকার হয়েছে তাদের দুর্বলতার কারণে । মিথ্যা কখনও শেষ হয় না, এবং এজেন্ট প্রত্যেক ছাত্রদের থেকে মুনাফা আদায় করে সব সুযোগের ব্যবহার করে।
এয়ারপোর্টে, যেখানে অভিবাসন কর্মকর্তারা বাংলাদেশী ছাত্রদের আটক করার নির্দেশের অধীনে রয়েছেন যতক্ষণ পর্যন্ত সেখানে কলেজ প্রতিনিধিরা তাদের গ্রহণ করতে না পৌঁছায় , এজেন্টরা প্রায়ই তাদের কাছ থেকে বলপ্রয়োগে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে। “আমি দুদিনের জন্য সেখানে অপেক্ষা করছিলাম,” ফরিদ জানায়, যে গুদামঘরে কাজ করে। এজেন্ট তাকে “বিমানবন্দর পিকআপ”-এর জন্য ২০০ রিঙ্গিত দিতে বলে, কিন্তু ফরিদ নীতিগতভাবে প্রত্যাখ্যান করে, এই যুক্তিতে যে এটি প্রাথমিক চুক্তির অংশ ছিল না। দুই দিন পার হওয়ার পর, কোন খাবার বা পানি ছাড়া যা সে কিনতে পারত এয়ারপোর্টের অতিরিক্ত মূল্যের দোকান থেকে।
আরও প্রতারণা চলতেই থাকলো। এজেন্ট ছাত্র ভিসার জন্য আবেদন করার জন্য তার পাসপোর্ট নিয়ে নিলো। একটি স্থানীয় কলেজ দ্বারা গৃহীত সমস্ত আন্তর্জাতিক ছাত্র, স্বল্পমেয়াদী একক এন্ট্রি ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া আসে। তারা পৌঁছানোর পর, ছাত্রদের তাদের পাসপোর্ট, একাডেমিক রেকর্ড এবং তাদের মেডিকেল রিপোর্ট কলেজকে জমা দিতে হয়, যারা তাদের পক্ষে ছাত্র ভিসার জন্য আবেদন করবে। কিন্তু ফরিদের এজেন্ট তার পাসপোর্ট ফেরত দিতে অস্বীকার করে ফরিদ অতিরিক্ত ৬৫০ রিঙ্গিত পরিশোধ না করা পর্যন্ত। প্রতিটি ধাপে, একজন এজেন্ট আছে যে তাকে বলছে কি করতে হবে এবং কত টাকা দিতে হবে।
একটি কলেজের এজেন্টের সাথে দেখা করার জন্য, আমরা একটি কারখানার সৃষ্টি করলাম। এটা কেপং’এর যেকোন জায়গায় একটি পোশাক প্রক্রিয়াজাতকারী কারখানা হবে, যেখানে পুরানো কাপড়গুলি সাজানো, প্যাক করা এবং বিদেশী ক্রেতাদের কাছে পাঠানো হবে। অবশ্যই, এটি একটি সম্পূর্ণ কল্পিত কারখানা। আমাদের একজন হবে ফ্যাক্টরি ম্যানেজার, যে বাংলাদেশ থেকে ছাত্র ভিসার মাধ্যমে প্রবাসী শ্রমিকদের পাচার/চোরাচালান করার চেষ্টা করছে।
“আমি বাংলাদেশ থেকে ৮০০০ শিক্ষার্থী নিয়ে এসেছি”, এজেন্ট দাবি করেন। “৩,৫০০জন ___ কলেজের অধীনে ছিল, ____ কলেজের অধীনে ২,৫০০ এবং _____________ ভাষা কেন্দ্রের অধীন ১৫০০।” “কবে থেকে?”। “২০১৩ সাল থেকে” এজেন্ট স্পষ্টত মালিয়াসিয়ান নয়, তার বাম চোখের নীচে একটি বড় দাগ রয়েছে বলে মনে হল। তার হাত ভর্তি ব্যয়বহুল আংটি এবং একটি সোনার ঘড়ি। সে ___ কলেজ প্রতিনিধিত্ব করে, একটি সুপরিচিত কলেজ যেটা পরিচালনা করে কুয়ালালামপুরের মধ্যকার একটি শপিংমল থেকে। আরও গোপন তদন্তের মাধ্যমে আমরা যাচাই করেছি যে সে প্রকৃতপক্ষে কলেজের মধ্যে একটি অফিস থেকে কাজ করে, এবং কর্মচারীরা আন্তর্জাতিক ছাত্রদের সম্পর্কিত বিষয় তার কাছে পাঠিয়ে থাকে।
তিনি আমাদের বলেন যে ছাত্রদের 98% এখানে আসে সস্তা শ্রমের কারণে, অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে না। এজেন্ট আমাদের কাছে তার সেবাসমূহ উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন অভিবাসন বিভাগের ঝামেলা এড়াতে ক্লাসের উপস্থিতি জালিয়াতি করা ” কয়েক শত রিঙ্গিতের “ব্যাপার।
“প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমদনপত্র (বিদেশী শিক্ষার্থীদের তালিকাভুক্ত করার জন্য) পায়, তারা টাকা খুঁজছে। টাকা উপার্জনের একমাত্র জায়গা হলো বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে – ২০০,৩০০ শিক্ষার্থী আনা, তাদের বিতরণ করা, আপনার অর্থ ইতিমধ্যেই ফিরে এসে যাবে। এই ভাবে তারা কাজটি করে থাকে । “
তিনি স্বীকার করেন যে, কলেজগুলোর মধ্যে একটি কলেজ আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীদের তালিকাভুক্ত করতে পারে না কারণ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশী ছাত্রদের বিবেকহীনভাবে নথিভুক্ত করার জন্য তাদের আন্তর্জাতিক ছাত্র অনুমদনপত্র বাতিল করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি একটি সমাধান দেন: তিনি অন্যান্য কলেজের মাধ্যমে ছাত্রদের চালান করতে পারবেন।
“কলেজগুলির জন্য, আমাদের আছে ____ কলেজ, _____ কলেজ, _____ কলেজ,” তিনি আরও দাবি করেন “আমাদের একটি ভাষা কেন্দ্রও আছে। এই সবগুলি আমাদের যৌথ উদ্যোগ প্রতিষ্ঠানের মতো।” মালয়েশিয়ায় রেজিস্ট্রি কোম্পানী কমিশনের(SSM) মালিকানা নথি অনুসারে দেখায় যে তিনি যে দুটি কলেজে নিয়োজিত ছিলেন তার পরিচালকরা একটি পৃথক ব্যবসার প্রধান খেলোয়াড় যা তাদের ওয়েবসাইটে “বিশেষ করে বিদেশী ছাত্রদের জন্য শিক্ষা পরামর্শ” হিসেবে উল্লেখিত।
এজেন্ট একটি নোটবুকের উপর স্কেচ করে চলে যে কিভাবে তিনি ১০ বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভিসা দিতে পারেন – প্রথমে তাদেরকে ভাষা শিক্ষা কেন্দ্রে ছাত্র হিসাবে তালিকাভুক্ত করা, তাদের ডিপ্লোমা, ডিগ্রি, মাস্টার এবং পিএইচডি কোর্স প্রদানের পূর্বে। যদি উচ্চতর শিক্ষার সাথে জড়িত ফিস একটি বাধা হয় তবে তিনি পরামর্শ দেন যে শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা ছাত্র হিসাবে তালিকাভুক্ত হবে, তারপর স্নাতকোত্তর পূর্বে কোর্স ছেড়ে এবং অন্য ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য অন্য কলেজে স্থানান্তরিত হবে।
ছাত্র পাচারকারী এজেন্টদের সাথে কথা বলতে R.AGE সাংবাদিকদের গোপন তদন্ত।
মূল সমস্যা এটিই । এই জালিয়াতির সাথে সংযুক্ত সমস্ত কলেজ স্পষ্টতই মুনাফার জন্য পরিচালিত হয়ে থাকে, অভিবাসী শ্রমিকদের পাচার /চোরাচালান করার উদ্দেশ্যে। তার ছাত্রদের শিক্ষা বিবেচনায় আনা হয় নামমাত্র। আমাদের প্রশ্নের একটি লিখিত জবাবে , মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় (MOHE) নিশ্চিত করেছে যে তারা, চারটি বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (HEIs) ২০১৫ থেকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি করার লাইসেন্স প্রত্যাহার করেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে, এর পিছনে শ্রেণিগত কারণ ছিল, কিন্তু সূত্রমতে যে চারটি কলেজ অনিয়মিতভাবে ব্যাপক সংখ্যক আন্তর্জাতিক ছাত্রদের নিয়ে আসছে – হাজার হাজার ছাত্র – এর মধ্যে ___ কলেজ একটি।
অন্যান্য এজেন্ট এবং কলেজ প্রতিনিধি যাদের সাথে আমরা গোপনভাবে দেখা করেছি তারাও আমাদের একই কথা বলেছে । কুয়ালালামপুরে একটি ভাষা কেন্দ্রের একজন ব্যবস্থাপক দাবি করেন যে তিনি ছাত্রদের বিভিন্ন ভাষা কোর্সে পরিবর্তন করে তিন বছর পর্যন্ত ভিসা দিতে পারেন। তিনি দাবি করেন যে কেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করতে আসা অভিবাসন কর্মকর্তাকে তিনি অর্থ প্রদান করতে পারেন। অন্য একটি এজেন্টের মাধ্যমে একটি কলেজ বিপণন প্রতিনিধির সাথে আমরা সাক্ষাৎ করি যে আমাদেরকে জানায় তার কলেজ, একটি মাঝারি আকারের কলেজ শুধুমাত্র “সঠিক” ছাত্রকেই গ্রহণ করে – যোগ্যতার অধিকারী প্রকৃত শিক্ষার্থী – কিন্তু “সবকিছু সঠিক রাখার বিষয়টি নির্ভর করে (এজেন্টের) উপর যে সে কোন পথে সঠিক করতে চায়।”
নয় মাসের তদন্তের মাধ্যমে, আমরা ২০ টির বেশি কলেজের একটি তালিকা সংগ্রহ করি যাদের মধ্যে ছাত্র পাচারে জড়িত থাকার লক্ষণগুলি দেখা যায়। এই কলেজগুলির উপর গোপন নজরদারিতে প্রকাশ পায় তাদের খালি শ্রেণীকক্ষ এবং নির্জন অফিস। এমনকি কিছু কলেজে শ্রেণীকক্ষ পর্যন্ত নেই , নিছক ছোট অফিসের লট থেকে পর্যালোচনা করে। এই কলেজগুলি গোপন পদ্ধতিতে অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগের কাজ করছে, এবং এতে প্রকৃত ছাত্রদের আনুসাঙ্গিক ক্ষতি হচ্ছে।
মাহফুজের চোখে পানি চলে আসে তার পরিবার সম্পর্কে কথা বলার সময়। কথোপকথনের বেশিরভাগ সময় সে উদ্বিগ্ন, দৃঢ়, এমনকি রাগান্বিতও হয়েছিল, কিন্তু বাংলাদেশে বসবাসরত তার বাবা, মা, এবং ছোট ভাইয়ের কথা চিন্তা করে সে তার স্বর পরিবর্তন করে।
“মালয়েশিয়ায় আমি কি করি তা তারা জানে না,” ভাঙ্গা ইংরেজী এবং মালয়ের সংমিশ্রণে সে বলল।
“এবং কেন তুমি তাদের বল না?” আমরা জিজ্ঞাসা করলাম।
“ব্যথা,” তার বুকের উপর তার হাত চাপড়ে তিনি উত্তর দেন। “ব্যথা।”
আমাদের সাথে সে কথা বলছিল কুয়ালালামপুরে তার সবচেয়ে প্রিয় ঘুরার স্থানটিতে , শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি বাংলাদেশী রেস্তোরাঁ যা প্রজ্বলিত পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার থেকে বেশী দূরে নয়, শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় পার্টি সড়কের ঠিক পাশেই। যখন চারপাশ চুপচাপ তখন বাতাসে EDM পাম্পিং-এর শব্দ শুনা যায় ।
এবং তারপরও, এটি একটি ভিন্ন জগতের মত মনে হয়। এই বিশেষ রাস্তায়, আমরা ঘিরে আছি কম খরচের জীর্ণ ফ্ল্যাটগুলো দ্বারা, এবং আমরা মানব পাচারের শিকার খুঁজে বেড়াই। মাহফুজের মতই।
চার বছর আগে, মাহফুজ বাংলাদেশে মাইকেল মধুসূদন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের চার বছরের ডিগ্রি কোর্সের অর্ধেক পথে ছিল, অধ্যয়ন করছিল দর্শনশাস্ত্র (philosophy)। এরপর তার একটি কলেজের এজেন্টের সাথে সাক্ষাত হয় যে তাকে একটি আকর্ষণীয় ধারণা দেয়। মালয়েশিয়ায় সে আরও বেশি মর্যাদাপূর্ণ ডিগ্রি অর্জন করতে পারবে এবং কুয়ালালামপুরে কাজের প্রচুর সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
মাহফুজের পরিবারের অবস্থা ছিল হতাশাজনক। তাঁর পিতা দুটি স্ট্রোক করেছেন,এবং আর কাজ করতে পারতেন না। তার ভাই মাত্র দশ বছর বয়সী। তাদের আশা এবং স্বপ্ন পুরোপুরিভাবে মাহফুজের কাঁধে। সুতরাং তারা চুক্তি মেনে নিলেন। তারা তাদের সমস্ত সঞ্চয় এমনকি ঋণ নিয়ে এজেন্টের অর্থ প্রদান করে। মাহফুজ তার ডিগ্রি কোর্স ত্যাগ করেন, এই বিশ্বাসে যে সে তার পরিবারের জন্য সঠিক জিনিস করছে।
কিন্তু সব ছিল মিথ্যা। কুয়ালালামপুরে কলেজটি ছিল ভুয়া। এদের কোন ক্লাস হয়না। তারা আরো অর্থের জন্য মাহফুজের কাছে জবরদস্তি করে তারপর তার পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেয়। এইখানে ছিল না কোন আরামপ্রদ কাজ, না ছিল কোন মর্যাদাপূর্ণ ডিগ্রী। মাহফুজকে যন্ত্রণা পেতে ফেলে রাখা হয়।
অন্য কোনও বিকল্প ছাড়াই মাহফুজ নির্মাণ শ্রমিকের কাজ শুরু করে দেয় যাতে কিছু টাকা সে বাড়ীতে পাঠাতে পারে। এবং ঠিক এইভাবে, চার বছর পার হয়ে গেছে, সে আগে ইংরেজি বলতে পারত, সে জানালো, কিন্তু এখন কিভাবে যেন ভুলে গেছে। একটি নির্মাণ সাইট চার বছরে এতটুকু করতেই পারে।
এখানে ঘটে নিকৃষ্ট প্রতারণা। প্রকৃত ছাত্ররা, এখানে আসার জন্য অতিরিক্ত ফি পরিশোধ করেছে , প্রতিটি ধাপে আরো অর্থের জন্য তাদের জোর করা হয়, অবশেষে তারা বুঝতে পারে যে তারা কোন শিক্ষা পাবে না।
ফরিদ আমাদের জানালো তার কলেজ কেমন ছিল: “ আমি পুরো কলেজ পরিদর্শন করেছিলাম, এবং আমি একটি ক্লাসেও পড়াতে দেখতে পাইনি। ক্লাসগুলি সবই খালি।” তিনি বর্ণনা করেন কিভাবে অনেক ছাত্র তাদের ভিসার জন্য কাগজপত্র জমা দিতে অপেক্ষা করছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই কাজের জন্য, পড়াশুনার জন্য নয়।
কলেজে গিয়ে ফরিদ বুঝতে পেরেছিল যে সে তার ইচ্ছামত কোর্সে পড়তে পারবে না। সে তার এজেন্টকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের জন্য আবেদন করতে বলেছিল, কিন্তু কলেজ অফার লেটার পাঠালে (যে কোন শিক্ষার্থী তাদের নিজ দেশে গ্রহণ করে, যখন কোনও কলেজ তাদের আবেদন গ্রহণ করে), সে বুঝতে পারে যে তাকে শুধুমাত্র কালিনারী আর্টসে ডিপ্লোমা দেওয়া হচ্ছে । সে তার এজেন্টকে জিজ্ঞাসা করে, যে তাকে বলেছিল মালয়েশিয়ায় আসার পর সে তার কোর্স পরিবর্তন করতে আবেদন করতে পারবে। কলেজ পরিষ্কারভাবে তাকে বলে দেয় যে এটি করা সম্ভব নয়, যদি না সে তার বর্তমান ছাত্র ভিসা বাতিল করে এবং পরের বছর নতুন ভিসার জন্য আবেদন করে। যার অর্থ হল আবার অন্য এজেন্টকে টাকা পরিশোধ করতে হবে।
“ আমি পড়াশোনার জন্য এসেছি, শুধুমাত্র আমার পড়াশোনার জন্য,” ফরিদ বলে, রেগে যায়। “ কিন্তু যখন আমি এখানে আসি, তখন আমি হতাশ হয়ে পড়ি।” তার কণ্ঠে হতাশা থেকে যায়: “আমার স্বপ্ন নিঃসৃত হয়ে গেছে। আমি যা কিছু ভেবেছিলাম সবকিছু এখন ভেঙ্গে গেছে।”
প্রায় একই সময়ে, ফরিদ জানতে পারে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং তার চিকিৎসার খরচ পরিবারের উপর একটি বোঝা হয়ে পরেছে। অর্থের জন্য বিভ্রান্তি ও হতাশা, ফরিদ কাজ করার পথ বেছে নেয় যাতে তার পড়াশুনার পিছনে তার পরিবারের বিনিয়োগ সে কিছুটা হলেও ফেরত দিতে পারে।
Episode 1: The Student Trafficking TradeTHE PREMIERE OF Student/Trafficked: Ep. 1 Human traffickers have been using private colleges in Malaysia to exploit thousands of Bangladeshi students. R.AGE goes undercover to investigate. Share this video to help student trafficking victims get a second chance at education. More info at rage.com.my/trafficked. R.AGE দল একটি চক্র এবং ব্যবসা যারা ছাত্র পাচার এবং সস্তা শ্রম দ্বারা শোষণের সাথে জড়িত তাদের ফাঁস করছে। rage.com.my/trafficked’র এই প্রচারে যোগ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পড়াশুনা করার দ্বিতীয় সুযোগ দিতে সাহায্য করুন।
Posted by R.AGE on Sunday, August 13, 2017
আমাদের প্রামাণ্যচিত্র ধারার প্রথম পর্ব হল ছাত্র পাচার বাণিজ্য নিয়ে
এইভাবে কলেজ ছাত্ররা, প্রতারিত, শোষিত এবং এখন নির্লিপ্তভাবে,পরিণত হয় অপরাধীতে। সামিন, কুয়ালালামপুরের একটি কলেজর ছাত্র, সেও কাজ করতে শুরু করেছে যখন আমরা কথা বলেছিলাম। সে একটি নির্মাণ সাইটে বিদ্যুৎ- মিস্ত্রি। বাংলাদেশে তার এজেন্ট সবচেয়ে সাধারণ মিথ্যাগুলো যা সব এজেন্টেরা বলে থাকে সেটা বলেছিল – সে তার পড়াশুনার খরচ চালাতে পার্টটাইম কাজ করতে পারে। শুধুমাত্র যখন সে এখানে এসে পৌঁছায় সে বুঝতে পারে যে ছাত্র ভিসার অধীনে কাজ করা অবৈধ।
মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক ছাত্ররা লম্বা ছুটি, তাদের কলেজ এবং অভিবাসন বিভাগের বিশেষ অনুমতি ব্যতীত কোন ধরনের কাজ করতে পারবে না ,এমনকি পার্টটাইম কাজও নয়। ধরা পড়লে ছাত্ররা পাঁচ বছর কারাদণ্ড, ১০,০০০ রিঙ্গিত জরিমানা এবং এমনকি বেত্রাঘাত করা হতে পারে। এর চেয়েও খারাপ হল, তাদের শাস্তি শেষ হওয়ার পর তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে, এবং তাদের পাসপোর্টগুলি কালো তালিকাভুক্ত করা হবে, সম্ভবত অন্য কোন দেশ থেকে তারা শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হবে।
এটি বাংলাদেশের ছাত্রদের মধ্যে একটি বিস্ময়কর সাধারণ ধারনা। নয় মাস পর্যালোচনার পর, আমরা ৩০টিরও বেশি অবস্থার সম্মুখীন হয়েছি যেখানে আন্তর্জাতিক ছাত্ররা শিকার হয়েছে মিথ্যা, শোষণ, বহিষ্কারের এবং বঞ্চিত হয়েছে শিক্ষা থেকে। এটি একটি নিয়োগ মাধ্যম যা মুনাফার জন্য শিক্ষার্থীদের দুর্বলতার ফায়দা নেয়। সংজ্ঞা অনুসারে, এটিই মানব পাচার।
অভিবাসী অধিকার সংস্থা Tenaganita পরিচালক এগাইল ফারনান্দেজ (Aegile Fernandez) এর মতে , “ এটিই মানব পাচার , কারণ মানব পাচারের সব উপাদান এর মধ্যে রয়েছে।” “ যেকেউ পাচারের শিকার হতে পারে, কেবলমাত্র শ্রমিক বা যৌনকর্মীদের নয়। এই ক্ষেত্রে, ক্ষতিগ্রস্তরা সকলেই ছাত্র।”
আশিক এতে সম্মতি জানায়: “হ্যাঁ, অবশ্যই এটি মানব পাচার। এজেন্ট এবং কলেজের এই ছাত্রদের উপর সব ক্ষমতা আছে, তাই তারা তাদের কাজে লাগায়। এটা বড় ব্যবসা – এর সাথে শুধু হাজার হাজার নয়, বরং লক্ষ লক্ষ রিঙ্গিত জড়িত। ”
আমরা শোষিত ছাত্রছাত্রীদের পথ অনুসরণ করে পৌঁছে গেলাম বাংলাদেশ। এখানে, উদ্বিগ্ন, ঘনবসতিপূর্ণ, অবিরাম অচলবস্থায় পতিত শহর রাজধানী ঢাকায় আমরা সম্মুখীন হলাম রাস্তা ভর্তি কলেজ ছাত্রদের, কলেজের আইডিগুলি দ্বারা সহজে চেনা যায় যা রয়েছে তাদের ঘাড়ে বা পিছনের কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে, তাদের কলেজের বাইরে রাস্তায় জড়ো হয়ে অপেক্ষা করছে তাদের পরবর্তী ক্লাসের জন্য। দেশের সবচেয়ে বড় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই রয়েছে পুরাতন পাঠ্যপুস্তক উৎপাদন, পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বিক্রির জন্য একটি সম্পূর্ণ মার্কেট। এই জটিলভাবে বিস্তার লাভ করা সরু গলি সংলগ্ন অস্থায়ী স্টলগুলোতে বইয়ের সন্ধানে আসা কলেজ ছাত্রদের ভিড়। এটা স্পষ্টত যে তৃণমূল শিক্ষার একটি ব্যাপক চাহিদা এই দেশে রয়েছে। এবং এই চাহিদা থেকে অনেকে মুনাফা আদায় করছে ।
“আপনি কি আমার জন্য কাজ ঠিক করে দিতে পারবেন যদি আমি আপনার মাধ্যমে ভিসা করাই?”
“আমরা আপনাকে পাঠাচ্ছি ছাত্র ভিসায়। কিন্তু আমাদের লোক আছে যারা আপনাকে কাজ পেতে সাহায্য করবে।”
এই কথোপকথনটি আমরা শুনছি ঢাকা শহরের একটি কলেজ এজেন্টের অফিসের নিচে পার্ক করা একটি ভ্যানে বসে । এই রাস্তাটিতে আমরা দেখতে পাই ছাত্র ভিসা সেবা বিজ্ঞাপনের সাইনবোর্ডে – সড়ক- বাতিগুলো থেকে ঝুলন্ত, দোকানের ফটকগুলিতে ভিড় করা, দেওয়ালগুলির উপর আঁকা, এমনকি একটি ছিল নিয়নবাতিতে পরিবেষ্টিত একটি বহুতল ভবনের উপরে লাগানো – এবং এই বিজ্ঞাপনগুলোর অনেকগুলোতেই মালয়েশিয়ান কলেজের লোগো ছিল। আমরা এই বিজ্ঞাপনগুলো থেকে কলেজ এজেন্টদের বাছাই করি, এবং তাদের সাথে দেখা করতে একজন গুপ্তচর সাংবাদিক পাঠাই।
“আপনি অবশ্যই মাল্যসিয়াতে কাজ করতে পারবেন,” এজেন্ট বলল। “ আপনার কোন সমস্যা হবে না যদি আপনি পড়াশুনার পাশাপাশি কাজও করেন কারণ আপনার সব কাগজপত্র হবে একজন ছাত্রের মত।”
এই একটি মিথ্যা প্রতি মাসে হাজার হাজার ছাত্র মালয়েশিয়ায় পাচার করে। ঢাকার প্রত্যেক এজেন্ট আমাদের গুপ্তচর সাংবাদিককে এই মিথ্যাটি পুনরাবৃত্তি করে। কিছু কিছু তাকে কাজ করে পড়াশুনার খরচ চালাতে উৎসাহিত করে।
“ ক্লাসে যেতে হবে না?”
“ ক্লাসের সময়সূচী আপনার পছন্দের ভিত্তিতে করা হবে। হয়তো আপনি সপ্তাহে দুই দিন ক্লাসে যোগ দিতে পারেন। বাকি সময় আপনি কাজ করতে পারবেন। ”
ই মিথ্যায় অনেকেই নিপতিত হয়েছে। আমরা ঢাকায় অধ্যয়নরত কলেজ ছাত্রদেরকে মালয়েশিয়ায় ছাত্র পাচারের সম্মুখীন কিছু ঘটনার বর্ণনা দিলাম তখন তাদের কেউ অবাক হয় নি। প্রায় সবাই মালয়েশিয়াতে পড়াশোনা করার সময় প্রতারিত হয়েছে এমন কাউকে না কাউকে চেনে। আমাদের প্রকল্প অংশীদার, বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার এর মাধ্যমে, আমরা মালয়েশিয়ায় পড়াশোনার জন্য নিযুক্ত তিনজন শিক্ষার্থীর সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম, যারা অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করেছে, কিন্তু শিক্ষা গ্রহণ ছাড়াই ফিরে এসেছে।
তাদের একজন, একজন যুবতী, আমাদের জানালো মালয়েশিয়াতে তার কলেজে কখনো একটা ক্লাসও হয়নি। কলেজের “ইন্টার্নশীপ প্রোগ্রাম” এর অংশ হিসাবে তাকে একটি খাবার হোটেলে কাজ করতে পাঠানো হয়েছিল, এবং তার পাসপোর্টটি কলেজ কর্তৃক আটকে রাখা হয়। তার স্বামী যে অধ্যয়ন (এবং কাজ) করছিল তার সঙ্গে, সে এক বছর পরে অবৈধ হয়ে পড়ে। তিনি অভিবাসন কর্মকর্তাদের কাছে ধরা পড়েন এবং তিন মাস ধরে কারারুদ্ধ ছিলেন। আরেকজন শিক্ষার্থী তার কোর্স ত্যাগ করে কারণ তার কলেজে দেওয়া শিক্ষার গুণগত মান ছিল খুবই খারাপ। আমরা এই ছাত্রদের জিজ্ঞেস করলাম কেন তারা মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের পরিস্থিতি জানায়নি। সর্বদা, তাদের কারণ ছিল ভয়।
রাতের বেলায়, শহর পরিদর্শন শেষে, আমরা করিমকে তার বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছি। আমরা আশ্চর্য হলাম যখন সে আমাদের বলল যে সে পেটালিংজায়ার বাহিরে একটি উন্নতমানের নিরাপদ জায়গায় থাকেন। তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করে, আমরা , বাংলোগুলি পার হয়ে, একটি বাগানেঘেরা হ্রদ যার রাস্তায় অধিবাসীদের তাদের রাতের খাবারের পর হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বামে মোড় নিতেই সড়ক -বাতিগুলো পাড় হয়ে পিছঢালা রাস্তা যখন শেষ হয়ে যায় তখন আমরা চিন্তিত হয়ে পরি। তুমি সত্যি এইখানে থাকো? হ্যাঁ, ঠিক সামনে, প্রবেশদ্বারটি ডানদিকে। উচ্চ জিংক বেড়া দিয়ে পরিবেষ্টিত, জীর্ণ পাতলা কাঠের বেড়া উঁচু করে স্তূপ আকারে রাখা, এইখানে করিম থাকে। এটি একটি কংসি। স্পষ্টত যে তার এজেন্ট, যে তার পড়াশোনার বিষয়ে তাঁর কাছে মিথ্যা বলেছে, এখন তাকে একটি নির্মাণ কর্মীদের থাকার জায়গায় এনে রেখেছে। আমরা অবিলম্বে তাকে Tenaganita-তে অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দিলেও, করিম তা নাকচ করে দেয়। সে ভীত।
এই কারনে প্রতারণা বন্ধ হবে না। পাচারকারীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কারণ পাচারকৃত ছাত্রদের আশ্রয়ের জন্য কোন নিরাপদ পথ নেই, তাই তারা তাদের পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে না। মালয়েশিয়ার বেশিরভাগ অভিবাসী অধিকার এনজিও অভিবাসী শ্রমিকদের বিষয়গুলির উপর নজর রাখে, অভিবাসী ছাত্রদের নয়। একইভাবে, বাংলাদেশী হাই কমিশন ছাত্রদের কাছ থেকে একটি অভিযোগও দায়ের করেনি। MOHE’র একটি অভিযোগ ব্যবস্থা আছে, কিন্তু অধিকাংশ ছাত্র এটা সম্পর্কে জানে না, এবং এটিতে ২০১৩ থেকে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের সাথে সম্পর্কিত মাত্র ২০টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ছাত্ররা ভয় পায় যে তাদের কলেজ থেকে প্রতিশোধের নিবে যদি তারা অভিযোগ করে।
এই কারণে, পাচারের উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়ায় কতজন ছাত্রকে নিয়ে আসা হয়েছে তা কোনও পরিসংখ্যানে পাওয়া যায় না, তবে একটি সম্ভাব্য নির্দেশক হল দেশের মধ্যে বাংলাদেশী ছাত্রদের সংখ্যা। MOHE’র সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় ৩০,৬৫৭ জন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী এইচইআইতে (HEIs) ভর্তি হয়েছিল। এটি এইচইআই’র (HEIs) এর মোট শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ, এই পর্যন্ত সর্বোচ্চ এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জাতীয়তার চেয়ে তিনগুণ বেশি। এর মধ্যে গণ্য হবেনা সে সকল অগণিত ছাত্রছাত্রী যারা পাচারের ঘটনার শিকার হয়ে অননুমোদিত হয়ে পড়েছে।
নভেম্বর ২০১৩ তে R.AGE দ্বারা যোগাযোগ করা হলে, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে এইসব ছাত্ররা পাচারের শিকার হতে পারে না এবং তারা শুধুমাত্র নিয়োগকারী এজেন্টদের “ভুল উপস্থাপনার” রিপোর্ট পেয়েছে দেশে থেকে। এক মাস পরে একটি ফলো-আপ ইন্টারভিউতে, মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা স্পষ্টতই এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানান, কিন্তু ছাত্রদের পাচারের বিষয়টি অস্বীকার করে একটি লিখিত পরোয়ানা জারি করে। উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রী দাতুক শ্রী ইদ্রিস জুসহে’র মনোযোগ আকর্ষণ করার কয়েক মাস পরেই আমরা কিছু উত্তর পেয়েছিলাম।
ইদ্রিস বলেন, “আমরা আবিষ্কার করেছিলাম যে আমাদের ইএমজিএস(EMGS) ব্যবস্থায় প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশী ছাত্রদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে” । ইএমজিএস, বা এডুকেশন মালয়েশিয়া গ্লোবাল সার্ভিসেস, হল একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যা সব আন্তর্জাতিক ছাত্রের আবেদন পর্যবেক্ষণ করে এবং প্রক্রিয়া করে। তিনি আরো বলেন ,“ আমরা ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে নয়টি কলেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, যার কারণে সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। গত বছরের ১৬,০০০ এবং তার আগের বছরের ২৩০০০ তুলনায় এই বছরে মাত্র ১১০০ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর ভিসা আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে।
উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ছাত্রদের ভর্তির বিবরন ২০১৫ সালে
এর মানে হল, এখন পর্যন্ত গত তিন বছরে মালয়েশিয়ার ৪০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার জন্য গ্রহণ করা হয়েছে, এবং আমরা যা শুনেছি, প্রায় সবাইকেই পাচার করা হয়েছে অথবা প্রত্যেকেই কমপক্ষে কোন না কোনভাবে শোষণের শিকার।
এবং অনথিভুক্ত অভিবাসীদের উপর সাম্প্রতিক চাপের কারণে, এইসব ছাত্রদের অনেকে, যারা এখন অননুমোদিত, তাদের অভিবাসন আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। সরকার অননুমোদিত অভিবাসী শ্রমিকদেরকে বৈধকরণের জন্য “ ই-কার্ড” ব্যবস্থা চালু করেছে, কিন্তু উল্লেখযোগ্যভাবে এজেন্টরা এই ব্যবস্থার অপব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনরায় শোষণের উপায় খুঁজে পেয়েছে।
ছাত্র পাচারের শিকার অনেকে R.AGE এর সাথে কথা বলেছে পুনরায় নিয়োগ কর্মসূচী সম্পর্কে জানতে যেটাকে তারা তাদের বর্তমান অবস্থা থেকে বের হওয়ার পথ হিসেবে দেখেছে । তারা অনুমিত এজেন্টকে ৩৫০০ রিঙ্গিত দিতে ইচ্ছুক, তাদের পাসপোর্ট দিতে এবং নতুন ভিসা আসার পড় আরো ৩৫০০ রিঙ্গিত দিতে রাজি ।
দুর্ভাগ্যবশত, অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক শ্রী মুস্তফার আলী R.AGE- কে নিশ্চিত করেছেন যে এই স্কিমটি শিক্ষার্থীদের ভিসার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। “ যদি মালয়েশিয়ায় আসার জন্য তাদের উদ্দেশ্য অধ্যয়ন করা হয়, তাহলে তাদের অধ্যয়ন করতে হবে। পড়াশোনা শেষ করার পরে, তাদের ফিরে যেতে হবে,” মুস্তফার বলেন।
যে সকল বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা দেখা করেছি, যারা এই প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করেছিলেন, একজনও ই-কার্ড পায়নি, এবং আবেদনের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা ছিল ৩০ জুন। এটি এজেন্টদের জন্য অতি সাধারন যে তারা অভিবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে পাসপোর্টগুলি আটকে রেখে দেয় অতিরিক্ত অর্থের আদায়ের জন্য, , তাই ছাত্রদের তাদের এজেন্টকে যেভাবেই হোক বাকি ৩৫০০ রিঙ্গিত দিতে হবে, শুধু তাদের পাসপোর্ট ফিরে পেতে।
সুখবর হল জনাব ইদ্রিস এবং জনাব মুস্তফার উভয়ই সবকিছু ঠিক করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ । ইদ্রিস বলেন যে কলেজ ও এজেন্টদের পাচারের ক্ষেত্রে MOHE আরো কঠোর উদ্যোগ নিবে এবং অন্য কোন কলেজে ক্ষতিগ্রস্তদের শিক্ষার জন্য অর্থ প্রদান করতে তাদের বাধ্য করবে। সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনার জন্য R.AGE- এর সাথে একটি গোপন বৈঠককালে, ইদ্রিস দৃশ্যত অসন্তুষ্ট ছিলেন। “ এই কলেজ এবং এজেন্টরা যা করছে তা হল পাপ! এটা ঘোরতর পাপ! ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আমার সত্যিই খারাপ লাগে” ,তিনি বলেন,এইসময় তিনি তার শীর্ষ কর্মকর্তাদের দ্বারা বেষ্টিত ছিলেন। “কিন্তু আমি কেবল দৃঢ় ভাষা ব্যবহার করতে চাই না। আমি পদক্ষেপ নিতে চাই। আমি এটি শেষ করতে চাই। ”
শেষবার করিমের সাথে আমাদের দেখা হয়, সে অবশেষে তার কংসি থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং অন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সাথে ফ্ল্যাট ভাড়া নিচ্ছে। আমরা তাকে এবং তার বাসার দুই বাসিন্দার সাথে তার ফ্ল্যাটের নিচে মুদি দোকানে দেখা করি। সে আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানায়, কিন্তু একটি আন্তর্জাতিক ছাত্র হওয়ার উদ্দীপনা – একটি নতুন দেশের সংস্কৃতি শেখা, নতুন মানুষের সাথে সাক্ষাৎ – সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যে মুহূর্তে আমরা কথোপকথন শুরু করি, আমরা তার হতাশা অনুভব করতে পারি।
“ আমার মাথায় খুব চাপ,” সে বলল। নিজের বর্ণনা করার সময় সে “ অসুস্থ” শব্দটি কয়েকবার ব্যবহার করেছে। সে দীর্ঘদিন ধরে উপলব্ধি করেছে যে মালয়েশিয়ায় তাঁর জন্য কোন শিক্ষা নেই, কিন্তু এত টাকা ব্যয় করার পর খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাওয়া অসম্ভব। কিছু না করে তার দিন কাটে , এবং তার টাকাও শেষ হয়ে যাচ্ছে । তার শুধুমাত্র একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প আছে। তিনি বলেন, “ আমার চাকরির প্রয়োজন, আমি কাজ করতে চাই,” সাহায্যের জন্য অনুরোধ করে সে বলে। “ আমার মাথা ঠিক নেই।”
তার পাশেই বসা তার বাসার হোসেন, বাংলাদেশ থেকে মাত্রই এসেছে, হাসছে, আমাদের সাথে কথা বলতে সে উত্তেজিত।
ছাত্র/পাচারের শিকার
প্রতি বছর শিক্ষা এবং চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা হাজার হাজার বাংলাদেশি ছাত্রদের মালায়সিয়াতে পাচার করে।
এদের বেশীর ভাগরাই এবং তাদের পরিবার তাদের সর্বস্ব দালালদের হাতে তুলে দেয়, লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় দালালরা। আর এই টাকা জোগাড় করতে অনেকে তাদের মূল্যবান সম্পদ বিক্রি করে দেয়, কেউবা জায়গা-জমি, যারা এটা এখন পড়ছেন তাদের বেশিরভাগই জানেন কেউ ঋণ নেয়, কেউবা তাদের বাড়ি বন্ধক রাখে।
দালালদের কাজই হচ্ছে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া। আপনাদের অনেকেই হয়তো এই মিথ্যার শিকার। অনেকেই হয়তো একই পরিমাণ টাকা নষ্ট করেছেন এবং নষ্ট করেছেন নিজেদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো এই মিথ্যার জালে পরে।
আমরা আপনাদের বলতে চাই যে আপনারা একা নয়। আমরা R.AGE এবং স্টার পত্রিকা কাজ করে যাচ্ছি আপনাদের গল্পগুলো তুলে ধরার জন্য, এবং আপনারা যাতে আপনাদের প্রয়োজন মত সাহায্য ও সহায়তা পান সেই ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে।
আমাদের নতুন কাজ, “ছাত্র/পাচারের শিকার”, যেটাতে তুলে ধরা হবে আপনারা কিভাবে অবিচারের শিকার হয়েছেন মালায়সিয়াতে, এবং মালায়সিয়ার সব সচেতন নাগরিকদের আপনাদের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য যুক্ত করা। আমরা যদি নাও পাই সবাইকে সাহায্যর জন্য, আমরা অন্তত তাদের কে বুঝাতে পারব আপনাদের অবস্থা।
আরো তথ্যর জন্য আমাদের ফেসবুক পেজ
facebook.com/studenttrafficked এবং
rage.com.my/trafficked
এ খোঁজ করতে পারেন। আর মনে রাখবেন – আপনি একা নন।
মালায়সিয়া আজ আপনার পাশে আছে।
TRANSLATION
Every year, thousands of Bangladeshi students are trafficked into Malaysia by agents promising them a college education and work opportunities.
Many of these students and their families pay a fortune to these agents, sometimes as much as four lakhs. To raise the money, some sell prized possessions, some sell land, some take loans and some remortgage their homes.
However, most of you reading this in Malaysia will know that the agents are liars. Most of you were victims of those lies. Most of you have wasted the same amount of money and the best years of your life because of those lies.
We want you to know that you are not alone. We at R.AGE and The Star have been working hard to make your stories heard, and to ensure that you get the help and support you need.
Our latest project, Student/Trafficked, aims to show everyone the injustice you have faced in Malaysia, and to get all concerned Malaysians involved in helping you. And if we can’t get everyone to help, we’ll at least get them to understand.
Find out more about our project at
facebook.com/studenttrafficked and
rage.com.my/trafficked.
And remember – you are not alone. Today, Malaysia stands with you.
Tell us what you think!